সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০

কীভাবে কাজে মনসংযোগ বাড়াবেন? (২য় পর্ব)



আমরা ১ম পর্বে জেনেছি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে মনযোগ স্থির করার মাধ্যমে কীভাবে কাজে   মনসংযোগ বাড়াতে পারি। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে মনযোগ স্থির করার উপায় সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছিল। আমরা সময়ের সুষম বন্টনের মাধ্যমে কঠিন ও চ্যলেঞ্জিং কাজগুলো সহজে করতে পারবো । আমরা জানি সময় এবং নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা না । আর সেই সময়কে সুষম বন্টনের মাধ্যমে আমাদের কাজের প্রতি মনযোগ বাড়াতে পারি। আজ আমরা জানবো সময়ের সুষ্ঠু বন্টনের মাধ্যমে কিভাবে কাজে মন সংযোগ বাড়াতে পারি।


১. চ্যালেঞ্জিং কাজ দিয়ে দিন শুরু করুনঃ


কার্যদিবসের শুরুতে আমরা মানসিক এবং শারীরিক দিক থেকে  সম্ভবত সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী থাকি, সুতরাং অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রমের কাজগুলো দিয়ে দিন শুরু করুন ।দিনের শুরুতেই নতুন বা সৃজনশীল কাজ করতে পারেন । সৃজনশীল কাজগুলোতে আপনার উচ্চমাত্রার মনসংযোগ করার প্রয়োজন হয়। দিনের শুরুতে আমাদের যেকোনো বিষয়ে মনঃসংযোগ করা সহজ হয়। যখন দেখবেন আপনি জটিল কাজ করে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন তখন আপনার দিনের বেসিক কাজ করতে থাকুন। দিনের শেষ ভাগে জটিল কাজ করা এড়িয়ে চলুন।সুন্দর ভাবে দিনের কাজগুলো শেষ করুন পরবর্তি দিন ঝাঁপিয়ে পড়ুন নতুন উদ্দমে ।

২. এক সময়ে শুধু একটি কাজেই ফোকাস করুনঃ

মাল্টিটাস্কিং, বা একটি কাজ থেকে অন্যকাজে মনোনিবেশ করা এবং একবারে অনেকগুলি কাজ করার চেষ্টা করা,  এতে আপনার কাজ করার শক্তি দ্রুত  কমতে শুরু করবে ।  একাধিক কাজ এক সময়ে কারার পরিবর্তে, একটি নির্দিষ্ট কাজ বেছে নিন এবং এটি সমাপ্তিতে মনোনিবেশ করুন। এই কাজটিকে নিখুঁত করে তুলুন। কেবল এটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করুন এবং  কাজটি শেষ হলে পরে  অন্যকাজে হাত দিন। এরফলে আপনার কাজে ভুল কম হবে এবং মানসিক প্রশান্তি বাড়বে। এছাড়াও আপনার যদি একটি বড় কাজে মনোযোগের প্রয়োজন হয় তবে সেই কাজটি কীভাবে ছোট ছোট ভাগে ভাগ  করা যেতে পারে তা নিয়ে পরিকল্পনা করুন। তারপরে, প্রথমে কোন কাজগুলি সম্পন্ন করতে হবে তার সিদ্ধান্ত নিন এবং কাজ শুরু করুন।

৩. কাজের সেরা সময় নির্বাচন করুনঃ

প্রত্যেক ব্যক্তির পুরো দিনের মধ্য কয়েক ঘন্টা থাকে যার মধ্যে তারা সাধারণত সর্বোত্তমভাবে কাজ করে। এক সপ্তাহের জন্য, এমন একটি চার্ট রাখুন যেখানে আপনি প্রতি ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ শক্তির স্তরটি লিখে রাখেন। তারপরে, আপনার শক্তি এবং উত্পাদনশীলতার শীর্ষগুলি কোথায় রয়েছে তা দেখতে তালিকাতে চোখ বুলিয়ে নিন । ভবিষ্যতে, এই নির্দিষ্ট ঘন্টাগুলি আপনার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজে ব্যয় করুন ।উদাহরণস্বরূপ, অনেক লোক দেখতে পান যে তারা সকাল ৯ টা থেকে ১১ টার মধ্যে সবচেয়ে ভাল কাজ করে এবং দুপুরে খাওয়ার পরে তাদের  কাজের গতি ধীরে হতে থাকে। দুপুরে খাওয়ার পরে কম পরিশ্রমের কাজগুলো শুরু করুন এবং পরবর্তি দিন সকালে আরও কঠোর পরিশ্রম শুরু করুন।আপনার সহকর্মীদের জন্য এটি পরিষ্কার করুন যে আপনি জরুরি না হলে আপনার কাজের সর্বোত্তম সময়ের মধ্যে আপনাকে যাতে বিরক্ত না করে।



৪. নিজস্ব সময়সীমা সেট করুন:

সম্ভবত আপনার বস বা নিয়োগকর্তা যখন আপনাকে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট দিবেন তখন সেটা সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় দিবে্ন। তবে, বিলম্ব এড়াতে এবং কাজে মনোনিবেশ বাড়াতে প্রতিটি কাজের জন্য আপনার নিজস্ব সময়সীমা তৈরি করুন। এটি অনুসরন করলে প্রতিটি কাজ শেষ করার জন্য  যথেষ্ট সময় পাবেন। আপনি যদি বেঁধে সময়ের আগেই কোনো নির্দিষ্ট কাজ শেষ করতে পারেন তাহলে অপেক্ষাকৃত জটিল কাজগুলো শেষ করার জন্য যথেষ্ট সময় পাবেন।


উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি রবিবারে অফিসে  উপস্থিত হওয়ার পরে  আপনার বস  আপনাকে একটি কাজ দিলেন এবং বৃহস্পতিবারের মধ্যে কাজটি শেষ করার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিলেন, এরপর আপনি কাজটিকে ৩ ভাগে ভাগ করে নিলেন ।আপনি সোমবার প্রকল্পের ১ম ভাগের কাজ করলেন, মঙ্গলবার ২য় ভাগ এবং বুধবার শেষ অংশের কাজ করার করতে ব্যক্তিগত সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারেন, তারপরে প্রুফরিড এবং সংশোধন করতে বৃহস্পতিবারটি ব্যবহার করুন।

চলবে............

লেখকঃ মোঃ আশরাফুল মাখলুকাত   
অ্যাসিস্টেন্ট এক্সিকিউটিভ, এএইচআর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ইমেইলঃ
ashrafulcuhrm@gmail.com
(এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত সব ছবিই
  সংগৃহীত ও প্রতিকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে)






বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০

কীভাবে কাজে মনসংযোগ বাড়াবেন ? (১ম পর্ব)

একটি সাধারণ কাজের দিনে আমাদের কিছু কারণে  মনোযোগ হারাতে পারে এবং কাজের প্রতি মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে যায় । এটি থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য আপনি প্রতিটি কাজে আপনার সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে চাইবেন। সংগীত শুনে বা চুইংগাম চিবানো সহ সাধারণ কৌশলগুলি ব্যবহার করে আপনি আপনার দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে পারেন। কাজের ক্ষেত্রে আপনার মনসংযোগ বৃদ্ধি করার জন্য আরও দীর্ঘমেয়াদী উপায়গুলির   অনুসরণ করতে পারেন, আপনার ডেক্স সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে রাখতে পারেন এবং আপনার ফোনে এবং কম্পিউটারে অপ্রয়োজনীয় সময় কাটানো থেকে বিরত থাকুন।



আপনার মনযোগ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির করুনঃ

আপনার মনযোগ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির করার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন।

ü একটু বিরতি নিয়ে গান শুনুনঃ

আপনার ডেস্কে একজোড়া হেডফোন রাখুন এবং ১০ মিনিটের জন্য বিরতি নিন। আপনি যখন গান শুনছেন, আপনার মন থেকে সমস্ত কাজ সম্পর্কিত চিন্তাগুলি সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন, কয়েকটি গভীর শ্বাস নিন এবং গান শুনুন। তারপরে, আপনার বিরতি শেষ হয়ে গেলে আবার কাজে ডুব দিন।



ü প্রতিটি কাজের নোট রাখুনঃ

আপনি যদি কোনো মিটিং বা কথোপকথনে মনোযোগ হারাতে থাকেন তবে আপনার ফোকাসকে
তীক্ষ্ণ করার জন্য বক্তার কথাবার্তা  নোট করতে পারেন । অনুমতিক্রমে আপনি মিটিং রেকর্ড করতে পারেন
এবং তারপরে রেফারেন্সের জন্য রেকর্ডটি পুনরায় চালু করে শুনতে পারেন।



ü গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় প্রয়োজন বুঝে ফোন বন্ধ রাখুনঃ

আপনি যখন কাজে ব্যস্ত থাকবেন তখন আপনার ফোনটি একটি বদ্ধ করে ড্রয়ারের মধ্যে রাখুন। অথবা, ফোন সাইলেন্ট মুড বা ভাইব্রেট মুড অন করেআপনার ডেস্কে ড্র্যয়ারে রাখতে পারেন। বিরতিতে আপনার ফোনটি চেক করুন। আপনার ফোনের স্কিন প্রায়শই চেক করা থেকে বিরত থাকুন এতে কাজে বিভ্রান্তি তৈরী হবে।





ü পাঁচ মিনিটের বিরতি নিনঃ

ঘড়িটি দেখুন এবং প্রতি ১ ঘণ্টা টানা কাজের জন্য পাঁচ মিনিটের বিরতি নিন। আপনি রিফ্রেশমেট রুমে যেতে পারেন, অফিসের চারপাশে হাঁটতে পারেন, অল্প জলখাবার খেতে  পারেন, এমনকি দাঁড়িয়ে এবং শরীরের কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করতে পারেন। এই নির্দিষ্ট বিরতির সময়গুলি আপনাকে কাজের প্রতি মনযোগ ধরে রাখতে এবং কাজ করার সময় আপনাকে আরো কাজের প্রতি ফোকাস ধরে রাখতে সাহায্য করবে । 


ü চুইংগাম চিবানো বা পিপারমিন্ট খেতে পারেনঃ

আপনি যদি  মনে করেন আপনার মনঃ সংযোগ ব্যহত হচ্ছে তাহলে চুইংগাম চিবাতে পারেন।আপনার কাছে যদি কোনো চুইংগাম না থাকে তবে একটি পেপারমিন্ট ক্যান্ডি মুখে রাখতে পারেন। 

 চুইংগাম এবং পেপারমিন্ট ক্যান্ডি উভয়ই চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে ব্যক্তির মনঃ সংযোগ ধরে রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। এছাড়াও যদি আপনি গোলমরিচ চিবান এটা আপনার মানসিক এবং শারীরিক উপকার করবে।

চলবে......


লেখকঃ মোঃ আশরাফুল মাখলুকাত, অ্যাসিস্টেন্ট এক্সিকিউটিভ-এএইচআর, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ইমেইলঃ ashrafulcuhrm@gmail.com

(এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত সব ছবিই  সংগ্রহিত ও প্রতিকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে)